মিজানুর রহমান, গ্রাম : খোয়াতপুর, উপজেলা : পাঁচবিবি, জেলা : জয়পুরহাট
প্রশ্ন : ধানের মাজরা পোকার প্রতিকার করব কিভাবে?
উত্তর : মাজরা পোকা ধান ফসলের একটি ক্ষতিকারক পোকা। তিন ধরনের মাজরা পোকার মধ্যে রয়েছে হলুদ মাজরা, কালো মাথা মাজরা এবং গোলাপি মাজরা। এ পোকার কীড়াগুলো কাণ্ডের ভেতর থেকে খাওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে গাছের ডিগ পাতার গোড়া খেয়ে কেটে ফেলে। এতে ডিগ পাতা মারা যায়। এ অবস্থাকে মরা ডিগ বা ডেডহার্ট বলা হয়। পোকার আক্রমণ হলে কাণ্ডের মধ্যে কীড়ার উপস্থিতি, খাওয়ার নিদর্শন এবং মল পাওয়া যায়। অথবা কাণ্ডের বাইরের রঙ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হওয়ার ছিদ্র পাওয়া যায়। শীষ আসার পর যদি আক্রমণ করে তাহলে সম্পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে সাদা শীষ, মরা শীষ বা হোয়াইট হেড বলা হয়। মরা ডিগ বা সাদা শীষ টান দিলে সহজেই উঠে আসে। মাজরা পোকা পাতার ওপরের অংশে, পাতার নিচের অংশে এবং পাতার খোলের ভেতরে দিকে ডিম পাড়ে। এ ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেললে ক্ষতি কমানো যায়। থোড় আসার আগ পর্যন্ত হাত জাল দিয়ে মথ ধরে ধ্বংস করা যায়। এছাড়াও ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোর ফাঁদ বসিয়ে এ মথ সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। ক্ষেতের মধ্যে ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিলে এরা পূর্ণ বয়স্ক মথ খায় ফলে মথের সংখ্যা কমে যায়। পরজীবী বা বন্ধু পোকা মাজরা পোকার ডিম নষ্ট করে কাজেই কীটনাশক প্রয়োগ যতটা সম্ভব বিলম্বিত করতে হবে। জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শতকরা ৫ ভাগ মরা শীষ দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন কার্বোফুরান গ্রুপের কীটনাশক ফুরাডান ৫জি বা ব্রিফার ৫জি হেক্টরপ্রতি ১০ কেজি হারে অথবা ডায়াজিনন গ্রুপের কীটনাশক (সার্বিয়ন ৬০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ৩.৪ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। রোগাক্রান্ত জমির আমন ধান কাটার পর চাষ দিয়ে নাড়া মাটিতে মিশিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
সিরাজুল ইসলাম, গ্রাম : কেসমত শোলাকিয়া, উপজেলা : বটিয়াঘাটা, জেলা : খুলনা
প্রশ্ন : শিম গাছের জাব পোকার প্রতিকার কি?
উত্তর : জাব পোকা শিমের একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক পোকা। এ পোকা গাছের নতুন ডগা, কচি পাতা প্রভৃতির রস চুষে খায় ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। গাছের বৃদ্ধি ও ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হয়। আক্রমণ বেশি হলে গাছে শুটি মোল্ড ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত গাছ মারা যায়। এ পোকার আক্রমণ যাতে না হয় সেজন্য জমি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। আক্রান্ত অংশ অপসারণ করে ফেলতে হবে। লেডি বার্ড বিটল প্রাকৃতিকভাবে জাব পোকা দমন করতে সহায়তা করে বলে এ বন্ধু পোকা লালন করতে হবে। ডিটারজেন্ট পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেও আক্রমণ অনেক কমানো যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার এডমায়ার মিশিয়ে শেষ বিকালে স্প্রে করতে হবে।
আমিরুল ইসলাম, গ্রাম : বাঁশথুপি, উপজেলা : ক্ষেতলাল, জেলা : জয়পুরহাট
প্রশ্ন : ধান ক্ষেতে ধানের গোছা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং গাছের গেড়া কালো হয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিকার কি?
উত্তর : ক্ষেতে ধানের ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। চারা রোপণের ১৫-২০ দিনের মধ্যে এবং বয়স্ক গাছে এ রোগ দেখা যায়। আক্রান্ত চারা গাছের গোড়া পচে যায়, পাতা নেতিয়ে পড়ে হলুদাভ হয়ে মারা যায়। রোগাক্রান্ত কাণ্ডের গোড়ায় চাপ দিলে আঠালো ও দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ বের হয়। বয়স্ক গাছে সাধারণত থোড় অবস্থা থেকে পাতাপোড়া লক্ষণ দেখা যায়। প্রথমে পাতার অগ্রভাগ থেকে কিনারা বরাবর আক্রান্ত হয়ে নিচের দিকে বাড়তে থাকে। আক্রান্ত অংশ প্রথমে জলছাপ পরে হলুদাভ হয়ে খড়ের রঙ ধারণ করে। পরবর্তীতে পুরো পাতা মরে শুকিয়ে যায়। আক্রমণপ্রবণ জাতের ক্ষেত্রে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। একসময় সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায় বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়। এ রোগ প্রতিহত করার জন্য সহনশীল জাত যেমন- বোরো মৌসুমে বিআর২, বিআর১৪, বিআর১৬ ও ব্রি ধান৪৫, আউশ মৌসুমে বিআর২৬ ও ব্রি ধান২৭ এবং আমন মৌসুমে বিআর৪, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৪২, ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৪৬ চাষ করা যেতে পারে। সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হবে। চারা ওঠানোর সময় শিকড় যেন কম ছেঁড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঝড়-বৃষ্টি এবং রোগ দেখা দেয়ার পর ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। রোগ দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে ৫-৭ দিন পর আবার পানি দিতে হবে, একই সাথে বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় পটাশ সার এবং থিওভিট প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ধান কাটার পর জমিতে নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
শাহাদাৎ হোসেন, গ্রাম : বানিয়াপাড়া, উপজেলা : কুড়িগ্রাম সদর, জেলা : কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : ধানের ভাসমান বীজতলা কিভাবে তৈরি করব?
উত্তর : বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা করার মতো জায়গা না থাকলে বা চারা তৈরির প্রয়োজনীয় সময় না থাকলে বন্যার পানি, নদী, বিল, পুকুর, ডোবা বা খালের পানির ওপর কলার ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যায়। এ ক্ষেত্রে কলাগাছ কেটে বাঁশ বা কঞ্চি দিয়ে জোড়া লাগাতে হবে। কলা গাছের ভেলার ওপর হোগলা বা চাটাই দিয়ে সেখানে মাটির প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া বাঁশ এবং বাঁশের চাটাইয়ের মাচা অথবা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি বেডের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ মাটির পাতলা কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলা তৈরি করা যায়। বন্যার পানিতে যেন ভাসমান বেড ভেসে না যায় সেজন্য ভাসমান বীজতলার বেডকে দড়ির সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হবে। এরপর মাটির আস্তরণের ওপর অঙ্কুরিত বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। এটি যেন পাখি বা অন্য কিছু নষ্ট করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না তবে প্রয়োজন হলে মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দেয়া যায়। এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় এক শতক ভাসমান বীজতলা ব্যবহার করা যেতে পারে। চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ করা যাবে। ভাসমান বীজতলায় তৈরি চারা অন্য স্বাভাবিক চারার মতো করেই রোপণ করতে হবে। এর পরিচর্যা, ব্যবস্থাপনা ও ফলনও অন্য স্বাভাবিক চারার মতো।
মাসুদ রানা, গ্রাম : মাথাভাঙ্গা, উপজেলা : পোরশা, জেলা : নওগাঁ
প্রশ্ন : আম গাছের নতুন পাতার গোড়া থেকে পোকা কেটে দিচ্ছে। এর প্রতিকার কি?
উত্তর : গাছে আমের পাতা কাটা উইভিল পোকার আক্রমণ হয়েছে। এ পোকা গাছের কচি পাতা কেটে দেয়। আক্রমণের পরিমাণ খুব বেশি হলে গাছে ফল আসে না। এ পোকার আক্রমণ দেখা দিলে গাছের নিচে পড়ে থাকা পাতা অপসারণ করে ফেলতে হবে। নতুন পাতা বের হওয়ার পর ফেনিট্রথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছের গোড়াসহ মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। বাগানের মাটি মাঝে মাঝে চাষ দিয়ে দিতে হবে। ফল সংগ্রহ শেষে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোঁটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত এবং অতি ঘন ডালপালা ছাঁটাই করে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এরপর একটি ছত্রাকনাশক ও একটি কীটনাশক দিয়ে পুরো গাছ ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
ফয়জুল রহমান, গ্রাম : চরপাঢ়া, উপজেলা : নান্দাইল, জেলা : ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : মাছ চাষ করতে চাই, প্রতি শতাংশে কতগুলো মাছের পোনা দেয়া যাবে?
উত্তর : চাষ পদ্ধতি ও মাছের প্রজাতির ওপর পোনার সংখ্যা নির্ভর করে। সাধারণত মিশ্রচাষে ৪০টি (৩/৪ ইঞ্চি সাইজের পোনা) : কাতলা ও সিলভার কার্প ২০টি, মৃগেল ১০টি, রুই ১০টি। অথবা কার্প ও গলদা চিংড়ি মিশ্রচাষে : কার্প ৪০টি এবং চিংড়ি ১০-১৫টি। আধা নিবিড় পদ্ধতিতে কার্প মিশ্রচাষে : কাতলা ১০টি, সিলভার কার্প ১৫টি, রুই ১০টি, মৃগেল ১০টি, সরপুঁটি ২০টি ও গ্রাসকার্প ২টি। মনোসেক্স তেলাপিয়ার একক চাষে : ২০০-২৫০টি পোনা। থাই কৈ একক চাষে : ৩০০-৩৫০টি পোনা। পাঙ্গাশ মিশ্র চাষে : প্রতি শতকে পাঙ্গাশ ৬০-১০০টি, সিলভারকার্প ২টি, শিং ২০টি, মাগুর ২৫টি।
সহিদুল ইসলাম, গ্রাম : কালিকাপুর, উপজেলা : পটুয়াখালী সদর, জেলা : পটুয়াখালী
প্রশ্ন : পানির ওপর লাল স্তর সৃষ্টি হয়েছে কিভাবে দূর করব?
উত্তর : এগুলো এক ধরনের প্লাংক্টন। এগুলোকে কাপড় দিয়ে টেনে পানি থেকে উঠিয়ে ফেলা ভালো, তাছাড়া পুকুরের পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক যেন পৌঁছাতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। অথবা প্রতি শতাংশে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ২-৩ বার (১০-১২ দিন পর পর) প্রয়োগ করা যেতে পারে। সুপ্রিয় পাঠক বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতিত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।
কৃষিবিদ ঊর্মি আহসান*
*উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (এলআর), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫